ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়া লিগ্যাল এইড কমিটির আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি ::
“বিনা খরচে নিন আইনি সহায়তা শেখ হাসিনা সরকার দিচ্ছে এই নিশ্চয়তা” এ পতিপাদ্যকে সামনে রেখে চকরিয়া লিগ্যাল এইড কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস- ২০২২ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলচকরিয়া উপজেলা মিলনায়তন মোহনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার চকরিয়া লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান ও সিনিয়র সহকারী জজ জিয়া উদ্দিন আহমদ সভাপতিত্ব করেন।
আজ ২৮ এপ্রিল। জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস। আইনগত সহায়তাপ্রাপ্তির অধিকার মূলত একটি সাংবিধানিক অধিকার।আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মূল সংবিধানেই আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারীসহ বিচার প্রক্রিয়ায় ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাইকে আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করার বিধান সন্নিবেশিত করে দেন।সংবিধানে স্পষ্টভাবে সন্নিবেশ করা হয়- সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবে (অনুচ্ছেদ ১৯.১)।প্রজাতন্ত্রের সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকারী (অনুচ্ছেদ ২৭)। কোনো ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না (অনুচ্ছেদ ৩৩.১)। প্রত্যেক নাগরিকের দ্রুত বিচার লাভের অধিকার থাকবে (অনুচ্ছেদ ৩৫.৩)।
সংবিধানে এসব বিধান অন্তর্ভুক্তির মধ্য দিয়ে ধনী বা আর্থিক সামর্থ্যবান নাগরিকদের পাশাপাশি দরিদ্র, অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত নাগরিকদের ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা হলেও স্বাধীনতা-পরবর্তী তিন দশকে দরিদ্র, অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত নাগরিকদের ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকারে আইনগত সহায়তা প্রদানের প্রাতিষ্ঠানিক কোনো কাঠামো চালু হতে দেখা যায়নি।
ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তিনি প্রথমবার সরকার গঠন করেই আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থসামাজিক কারণে বিচার পেতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থী জনগণকে সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা প্রদান করার লক্ষ্যে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০’ প্রণয়ন করে দেন এবং জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে সরকারি আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন।
অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট রাজীব কুমার দেব, বিশেষ অথিতি চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার চকরিয়া সার্কেল মোহাম্মদ তৌফিকুল আলম,চকরিয়া সহকারী কমিশনার(ভূমি) মোহাম্মদ রাহাতউজ্জামান,চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চন্দন কুমার চক্রবর্তী প্রমুখ।এসময় চকরিয়া উপজেলার ১৮ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সচিবগণ,চকরিয়া চৌকি আদালতের কর্মচারীগণ, চকরিয়া এডভোকেট এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ ও সুধী সমাজের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট রাজীব কুমার দেব বলেন, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসগুলোকে এখন শুধু আইনি সহায়তা প্রদানের কেন্দ্র হিসাবে সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি। মামলা জট কমানোর লক্ষ্যে এ অফিসগুলোকে ‘এডিআর কর্নার’ বা ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির কেন্দ্রস্থল’ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এজন্য ২০১৫ সালে ‘আইনি পরামর্শ ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি’ বিধিমালা প্রণয়ন করে লিগ্যাল এইড অফিসারদের এডিআর বা বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির আইনি ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন,লিগ্যাল এইড কার্যক্রম আরো কার্যকর ও ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে ২০১৭ সালে দেওয়ানি কার্যবিধির সংশ্লিষ্ট ধারা সংশোধন করা হয়েছে। বর্তমানে প্রত্যেক জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে একজন করে সিনিয়র সহকারী জজ/সহকারী জজকে লিগাল এইড অফিসার হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং তারা আইনগত সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছেন। ২০১৬ সালে সরকারি আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যক্রমকে ডিজিটাইজেশন করা হয়। এ ব্যবস্থাপনার আওতাভুক্ত করা হয় জাতীয় হেল্পলাইন কলসেন্টার ১৬৪৩০। টোল ফ্রি এ নম্বরে ফোন করে যে কেউ আইনি পরামর্শ নিতে পারেন। সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় লিগ্যাল এইড সেবা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে চালু করা হয় লিগ্যাল এইড অনলাইন কার্যক্রম।মূলত এই কার্যক্রমকে গতিশীল করার লক্ষে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান তিনি।

পাঠকের মতামত: